লৌহজং উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমেও পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রবল স্রোত আর নদীর ঢেউয়ের আঘাতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মানুষের কৃষি জমি ও বসতভিটা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
ভাঙনের শিকার ইউনিয়নগুলো
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) লৌহজংয়ের কুমারভোগ, হলদিয়া, কনকসার, লৌহজং-তেউটিয়া, বেজগাঁও, গাঁওদিয়া ও কলমা ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে কৃষি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর ভাঙন প্রতিরোধে কিছু এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও স্থায়ী বাঁধের কাজ ধীরগতিতে চলছে। ফলে ভাঙন থামছে না।
প্রতিবছরের ক্ষতি ও মানুষের দুর্দশা
বিগত দুই দশকের বেশি সময় ধরে লৌহজংয়ে পদ্মা নদীর ভাঙনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। গত বছর লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রামে ২০-২৫টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেক পরিবার তাদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
গাঁওদিয়া ইউনিয়নের মো. আইনউজ্জদিন বলেন, “আমার বাড়ির পাশের কৃষি জমি ও বসতভিটার অনেক অংশ ভেঙে গেছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। তারা জিও ব্যাগ ফেলার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হচ্ছে না।”
সরকারি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে অভিযোগ
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় ৪.৫ কিলোমিটার এলাকায় বালুভর্তি ৮ লাখ বস্তা ফেলার কাজ চলছে। এর পাশাপাশি বালু ও সিমেন্ট মিশ্রিত আরও ২ লাখ বস্তা ফেলা হবে।
তবে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। লৌহজং থেকে টঙ্গীবাড়ির দিঘির পাড় পর্যন্ত ৯.১০ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৪৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পও কার্যকর হতে সময় লাগছে।
প্রশাসনের বক্তব্য
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, “সীমিত বরাদ্দের মধ্যে আমরা জিও ব্যাগ ফেলে তীর রক্ষা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। দ্রুতই আরও বরাদ্দ পাওয়ার আশা করছি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, “ভাঙন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ওই এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।”
এলাকাবাসী দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, বাঁধ নির্মাণ হলে ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশে এই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে।