গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীতে রাতের আঁধারে অবৈধ বালু উত্তোলন যেন থামছেই না। প্রভাবশালী চক্রের নেতৃত্বে প্রতিদিনই চরকালীপুরা, গুয়াগাছিয়া ও মল্লিকেরচর সংলগ্ন এলাকায় বেপরোয়া ভাবে চলছে এ কার্যক্রম। এতে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা তীব্র ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই অবৈধ উত্তোলনের ফলে তিন ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, মল্লিকেরচর এলাকায় বাবলা বাহিনী এবং গুয়াগাছিয়া এলাকায় নয়ন বাহিনী রাতভর ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে। গত ২২ অক্টোবর প্রতিপক্ষের গুলিতে বাবলা বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পরও থেমে নেই এই অবৈধ কার্যক্রম। বাবলার হত্যাকাণ্ডের জেরে দুই বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হলেও মেঘনায় বালু উত্তোলনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের দুর্ভোগ ও প্রশাসনের অভিযান
চরকালীপুরার বাসিন্দা শাহিদা বেগম বলেন, “রাতে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটে। বাধা দিতে গেলে আমাদের গুলি করার হুমকি দেওয়া হয়। আমরা ভয়ে কিছু করতে পারি না।” গ্রামবাসীর দাবি, রাতের অন্ধকারে ৫০টিরও বেশি ড্রেজার ও শতাধিক বাল্কহেড দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। এসব বালু উত্তোলনের ফলে নদীর তীরবর্তী জমি ধসে পড়ছে এবং গ্রাম ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযান চালিয়েছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন শরীফ জানান, সম্প্রতি দু’টি অভিযানে বালুবাহী ৫টি বাল্কহেড আটক এবং জড়িত ৮ জনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। তবে অভিযানের আগেই বেশিরভাগ চক্র পালিয়ে যায়, যা এ কার্যক্রম রোধে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৈধ ইজারাদারদের ক্ষোভ
এদিকে, বৈধ ইজারা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ অফিসার মোহাম্মদ রিফাত হোসাইন জানান, “সরকার নির্ধারিত মহাল থেকে আমরা দিনে বালু উত্তোলন করি। কিন্তু রাতের বেলায় অবৈধ ড্রেজার ও বাল্কহেড আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি করছে।” তার দাবি, এই অবৈধ কার্যক্রমের কারণে তারা প্রত্যাশিত রাজস্ব হারাচ্ছেন।
সমাধানের পথ খুঁজছে প্রশাসন
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার জানিয়েছেন, “অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। তবে অভিযানের আগেই চক্রটি পালিয়ে যায়।” স্থানীয়রা প্রশাসনের আরও কঠোর ও নিয়মিত তৎপরতার দাবি জানিয়েছেন।
মেঘনার বুকে রাতের বালু উত্তোলন শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে না, এটি স্থানীয় কৃষি, পরিবেশ এবং বাসিন্দাদের জীবিকাকেও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলছে। প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।