মুন্সীগঞ্জ জেলার জনসংখ্যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৪১৬ জনে, যা গত এক দশকে বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ৬ষ্ঠ জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যদিও গণনা সম্পন্ন হয় ২০২২ সালে, প্রতিবেদনটি প্রকাশ পায় ২০২৫ সালের মে মাসে।
বিবিএসের তথ্যমতে, জেলাটির ছয় উপজেলা—মুন্সীগঞ্জ সদর, টংগিবাড়ী, লৌহজং, শ্রীনগর, সিরাজদিখান ও গজারিয়া—মিলিয়ে পুরুষের সংখ্যা ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫০৬ জন, নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৩৬ হাজার ৮৪৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ৬২ জন। ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমান ১৫ লাখ ৯৮৪ জন, হিন্দু ১ লাখ ২২ হাজার ২৩৮ জন, খ্রিস্টান ১ হাজার ৮৬৭ জন, বৌদ্ধ ১৫৯ জন এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী ১৬৮ জন।
২০১১ সালের তুলনায় জেলার জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। তখন প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষ ছিল ১ হাজার ৪৩৯ জন, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০২ জনে। এই বৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীভাঙন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, সামাজিক মর্যাদা এবং রাজধানীর সঙ্গে উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা জনসংখ্যা বৃদ্ধির বড় কারণ।
বিশেষ করে পদ্মা নদীর ভাঙনে লৌহজং উপজেলার বহু পরিবার স্থানচ্যুত হয়ে উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায় আশ্রয় নিচ্ছে। গত ১০ বছরে এ উপজেলায় জনসংখ্যা বেড়েছে ১৬ হাজারেরও বেশি। একই সঙ্গে সদর উপজেলার চরাঞ্চল থেকেও অনেকে শহরমুখী হয়েছেন ব্যবসা, শিক্ষা ও উন্নত জীবনযাপনের আশায়।
মুন্সীগঞ্জ শহরের চিত্র আরও প্রকট। ২০০১ সালে শহরের জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার, যা ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮৭ হাজারে। শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা এখন ১ হাজার ৯৯৯ জন—অর্থাৎ ঘনত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নাগরিকদের অভিযোগ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শহরের সড়ক, পৌরসুবিধা ও অবকাঠামো একই রয়ে গেছে। ফলে যানজট, পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যা এবং সংকীর্ণ সড়ক মিলিয়ে শহর ক্রমে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
বিবিএসের মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক শারমিন করিম জানান, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জেলায় শিক্ষার হারও বেড়ে ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি স্থানীয় অবকাঠামো ও নাগরিক সুবিধার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যা ভবিষ্যতে নগর পরিকল্পনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা দাবি করে।