মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা দ্বিতল সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, যার মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। প্রকল্প পরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রায় ৭৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মান বজায় রেখে কাজ শেষ করতে দিন-রাত তিন শিফটে কাজ চলছে।
২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হলে এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এর ফলে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে, পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের যানবাহন আর রাজধানী অতিক্রম না করেই দক্ষিণাঞ্চলে যেতে পারবে। এতে ঢাকার যানজট অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মোট ১০.৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৯.৬ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড বা দোতলা সড়ক এবং বাকি অংশ মাটির সমতলে নির্মিত হবে। এটি ছয় লেন বিশিষ্ট আধুনিক মহাসড়ক হিসেবে তৈরি হচ্ছে, যেখানে থাকবে টোল প্লাজা, গোলচত্বর, সংযোগ সড়ক, র্যাম্প এবং ওজন পরিমাপক কেন্দ্র।
প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়। চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান—“স্যানডং লুকিয়াও গ্রুপ” ও “স্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ”—এই কাজ বাস্তবায়ন করছে।
পঞ্চবটি থেকে কাশিপুর পর্যন্ত ৩.৫ কিলোমিটার হবে অ্যাটগ্রেড সড়ক, আর কাশিপুর থেকে চর সৈয়দপুর পর্যন্ত ২.৭৬ কিলোমিটার নিচু ভূমির ওপর নির্মিত হবে। যানজট নিরসনে পঞ্চবটি মোড় থেকে ফতুল্লা ও চাষাঢ়ার দিকে ৩১০ মিটার করে ছয় লেনের দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। মুক্তারপুর সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে ৪৪৩ মিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে এবং চর সৈয়দপুর এলাকায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর সংযোগস্থলে নির্মিত হবে একটি গোলচত্বর। নিচতলার সড়কটিতে ফ্রি চলাচল করা যাবে, তবে দোতলায় চলাচলে টোল দিতে হবে।
এ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় দেড় হাজারেরও বেশি গার্ডার তৈরি সম্পন্ন হয়েছে, যার অনেকগুলো ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। মোট ২৭৩টি স্প্যানের মধ্যে প্রায় ১৫০টির ডেক স্ল্যাবের কাজ শেষ হয়েছে। বিশেষ করে পঞ্চবটি এলাকায় গার্ডার স্থাপন ও স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ জোরেশোরে চলছে।
তবে নারায়ণগঞ্জের গোপচর এলাকায় জমি অধিগ্রহণের অর্থ পরিশোধে দেরি হওয়ায় সেখানে কাজ কিছুটা ধীরগতিতে চলছে। এই সমস্যার সমাধান হলে গার্ডার ও স্ল্যাব স্থাপনের কাজ আরও দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
এই প্রকল্পটি ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায়। এর আগে ২০০৮ সালে ধলেশ্বরী নদীর ওপর ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের পর পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কটি সংযোগ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। কিন্তু মাত্র ৫.৫ মিটার প্রশস্ত সরু ও আঁকাবাঁকা হওয়ায় এ সড়কে নিয়মিত যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটত।
মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকায় সিমেন্ট কারখানা, হিমাগার ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত ভারী যানবাহনের চলাচল এই সড়কে প্রতিদিনের বিষয়। এছাড়া বিসিক শিল্পনগরী ও বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার হাজারো শ্রমিক এই সড়ক ব্যবহার করেন। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ “পঞ্চবটি থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা সড়ক নির্মাণ” প্রকল্প হাতে নেয়। সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত গতিতেই এগোচ্ছে, এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এটি চালু করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।