আধুনিক মানুষ অস্তিত্ব-চেতনায় আপাদমস্তক আন্দোলিত নিঃসঙ্গ ভীত-সন্ত্রস্ত ও দ্বিধান্বিত প্রাণী। জঁ পল সার্ত্র পরমাত্মা নয় বরং মানুষের স্বাধীন প্রয়াসকেই গুরুত্ব দিলেন। তার মতে মানুষ প্রথমে অস্তিত্বশীল হয়, তারপর অতীন্দ্রিয় সত্তা সম্পর্কে ভাবে। অতএব অস্তিত্বশীল হওয়াই মুখ্যকথা। অস্তিত্ববাদী চিন্তা-চেতনা বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বকেই আলোড়িত করে। মানুষ তার কৃতকর্মের সমস্ত দায় মাথায় নিয়ে হয়ে ওঠে বিষণ্ন ও অবসাদগ্রস্ত। অস্তিত্ববাদ সমষ্টি নয়, বরং ব্যক্তিসত্তার অস্তিত্বসংকটকেই গুরুত্ব দেয়। অস্তিত্ববাদ সদর্পে ঘোষণা দেয়— “Existence precedes essence”
সাহিত্যক্ষেত্রেও এ মতবাদটি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সাহিত্যে অস্তিত্ববাদের প্রথম সফল প্রবক্তা রুশীয় সাহিত্যিক ফিওদর দস্তয়েভস্কির (১৮২১-১৮৮১) ‘ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট’, ‘দ্য ইডিয়ট’ প্রভৃতি গ্রন্থে অস্তিত্ববাদের তীব্র উপস্থিতি লক্ষযোগ্য। অস্তিত্ববাদী দর্শনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবক্তা জঁ পল সার্ত্র অস্তিত্ববাদকে সাহিত্যের আঙ্গিকে সফলভাবে প্রকাশ করেছিলেন। এক্ষেত্রে তার ‘Nasuea’ বা ‘বিবমিষা’ একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এছাড়া ‘দ্য এজ অব রিজন রিপ্রিভ’ ও ‘আয়রন ইন দ্য সোল’ নিয়ে তার ত্রয়ী উপন্যাস ‘দ্য রোডস টু ফ্রিডম’ও এক্ষেত্রে উল্লেখের দাবি রাখে। অস্তিত্ববাদী সাহিত্যিকদের মধ্যে আলবেয়ার কামু (১৯১৩-১৯৬০), ফ্রাঞ্জ কাফকা (১৮৮৩-১৯২৪), স্যামুয়েল বেকেট, ইউজিন ইয়োনেস্কো প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলা সাহিত্যেও অস্তিত্ববাদের প্রভাব পড়েছে গভীরভাবে। তিরিশের দশকের সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও জীবনানন্দ দাশের কবিতায় অস্তিত্বচেতনার চিহ্ন সুস্পষ্ট। শামসুর রাহমান প্রবলভাবে একজন অস্তিত্বসচেতন কবি। তার কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে মানব-অস্তিত্বকে ঘিরে থাকা অজানা ভয়, শঙ্কা, বিষাদ ও অন্তহীন বিবমিষা।