দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ বেকারত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন। তরুণদের ৫৫ শতাংশ পড়াশুনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যেতে চায়। চাকরির সুযোগ কম থাকার কারণে দেশে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যাশাও বেড়েছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্ট ২০২৪’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর ফুলার রোড মিলনায়তনে গবেষণার ফল প্রকাশ করে ব্রিটিশ কাউন্সিল।অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গবেষণা সিরিজটি তৃতীয়বারের মতো প্রকাশ করা হলো। ২০১০ ও ২০১৫ সালে আগের দু’টি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই আয়োজনে সরকারি ও বেসরকারি খাত, দেশি-বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মিডিয়া ও তরুণ জনগোষ্ঠীর ১২০ জনের বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন।
তরুণ বাংলাদেশিদের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি, ও প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ কাউন্সিল এই ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ প্রতিবেদন শীর্ষক গবেষণার উদ্যোগ নেয়। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তরুণ জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি, চাহিদা ও প্রতিবন্ধকতা গভীরভাবে উপলব্ধি করাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য।
ব্রিটিশ কাউন্সিল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হেলেন সিলভেস্টার তার স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
তিনি বলেন ‘আজ নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ রিপোর্ট ২০২৪’ প্রকাশ করতে পেরে আমরা গর্বিত। এ রিপোর্ট তরুণদের অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে তাদের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে। সরকারি, বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষা, দক্ষতা, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ব্রিটিশ কাউন্সিল।’
নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪-এর ফলাফল এবং সারসংক্ষেপ সবার সামনে উপস্থাপন করেন এমঅ্যান্ডসি সাচি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেসের ইভ্যালুয়েশন অ্যান্ড লার্নিং বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অব রিসার্চ আইবেক ইলিয়াসভ। এই গবেষণাতে নানা শ্রেণি ও পেশার ১৮-৩৫ বছর বয়সী মোট ৩ হাজার ৮১ জন মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। উত্তরদাতাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসে। এতে প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী (৪৬ শতাংশ) লিঙ্গ-বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছে, বিশেষ করে নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। যদিও তরুণদের মধ্যে বাংলাদেশি জাতীয়তার গর্ব ও চেতনার দৃশ্যমান প্রতিফলন রয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের আশাবাদ ২০১৫ সালে ৬০ শতাংশ ছিল, ২০২৪-এ তা কমে হয়েছে ৫১ শতাংশ। ৪২ শতাংশ তরুণের কাছে বেকারত্ব একটি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয়। এছাড়া, ৫৫ শতাংশ জানিয়েছেন তারা পড়াশুনা বা কাজের উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ইচ্ছুক, বিশেষ করে সৌদি আরব ২৭ শতাংশ ও কানাডায় ১৮ শতাংশ। চাকরির সু্যোগ কম থাকার কারণে এখানে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রত্যাশা বেড়েছে, প্রতি ১০ জন বাংলাদেশি তরুণের ৪ জনই (৪৪ শতাংশ) আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নিজেদের ব্যবসা শুরু করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ফলাফল থেকে আরও দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ তরুণ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আরও আস্থা আনা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন। যেখানে নাগরিক নেতৃত্বের অভাব থাকায় নিজেদের কমিউনিটির সিদ্ধান্ত নিতে যুক্ত হন মাত্র ১৭ শতাংশ তরুণ।
আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের কালচারাল এনগেজমেন্টের রিসার্চ অ্যান্ড ইনসাইটস ডিরেক্টর ক্রিস্টিন উইলসনের পরিচালনায় ‘স্কিলস ফর দ্য ফিউচার’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন জয়া চৌধুরী, এডিবির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (শিক্ষা) সৈয়দ রাশেদ আল জায়েদ জশ, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকোনমিস্ট ও ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এনএসডিএ) পরিচালক (সার্টিফিকেশন) শুভ্রা রায় এবং এইচএসবিসি বাংলাদেশের হেড অব সাস্টেনিবিলিটির সৈয়দা আফজালুন নেসা।