ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দোগাছি এলাকার সার্ভিস সড়কে গুলি করে সাহিদা ইসলাম রাফাকে (২৪) হত্যার ঘটনায় তৌহিদ শেখ তন্ময় (২৮) নামে ওই নারীর প্রেমিককে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে দায়েরকৃত হত্যা মামলায়। ঘটনার পর থেকেই ওই যুবককে খুঁজছে পুলিশ।
রোববার সকাল দশটায় শ্রীনগর থানায় নিহত তরুণীর মা জরিনা খাতুন বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত একাধিক ব্যক্তির কথা উল্লেখের পাশাপাশি তৌহিদ শেখ তন্ময়ের সাথে প্রেম ও দ্বন্দের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। শ্রীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিকালে ওই নারীর মরদেহ ২৫০ শয্যা মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছে। সন্ধ্যায় সেটি দাফনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় দেশের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বেগুনবাড়িতে।
গতকাল শনিবার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দোগাছি এলাকায় শরীরে একাধিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের পাশ থেকে পাওয়া যায় ৫ রাউন্ড গুলির খোসা। সুরতহাল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ ফিরোজ কবির জানান, ওই নারীর শরীরে ৫টি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। এর চেয়ে বিস্তারিত ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, ভোরে ওই নারীকে পদ্মা সেতু উত্তর থানা সংলগ্ন খান বাড়ি সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকা থেকে মুখে দাড়িওয়ালা এক যুবকের সাথে মহাসড়কের সার্ভিস লেনে হেটে এগোতে দেখা যায়। এর আগে সেখানে তর্কে জড়ান তারা। চড়-থাপ্পড় দিতে দেখা যায় নারীকে। তবে গুলি করতে দেখেননি কেউ। বেলা পৌনে এগারোটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। বিকালে নিহত নারীর সাথে থাকা মোবাইলের সিমের সূত্র ধরে ওই নারীর পরিচয় সনাক্ত করে থানা পুলিশ। পরে খবর পেয়ে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
পরিবার জানায়, নিহত সাহিদা রাজধানী ঢাকার ওয়ারিতে পরিবারের সাথে থাকতেন ও নারিন্দা এলাকার বলধা গার্ডেন সংলগ্ন জনৈক কামাল মিয়ার বাড়িতে দেখাশোনার (ডে-কেয়ার) কাজ করতেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি গ্রামের মৃত মো. মোতালেবের মেয়ে তিনি। তারা ২ ভাই ও ৩ বোন। তাছাড়া ৭-৮ বছর আগে সাহিদার একটি বিয়েও হয়েছিলো। পরে সেই সম্পর্ক টিকেনি।
নিহতের মা জরিনা খাতুন বলেন, ‘মুখে দাড়িওয়ালা তৌহিদ নামের এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করতেন সাহিদা। তাদের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে প্রায়ই মারামারি হতো। এমনকি আমি নিজেও ওই যুবকের কাছে মারধরের শিকার হয়েছি বেশ কয়েকবার।’
তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে আমি প্রেমের বিষয়টি মেনেও নেই। কিন্তু ছেলের পরিবার মানতে চাইতো না। আমার কাছে ছেলের মা বিয়ে বাবদ ১০ লাখ টাকাও চায়। আমি বাসা-বাড়ি কাজ করে খাই। ১০ লাখ টাকা কোথা থেকে দিবো! কয়েক মাস আগে চাঁদপুরে গিয়ে আপত্তিকর অবস্থায় তৌহিদ-সাহিদা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। থানা থেকে আমাকে খবর দেয়া হলে আমি রাগে-ক্ষোভে যাইনি। পরে ছেলের পরিবারের সদস্যরা গিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে দুইজনকে। তবে আমার ছেলেটাকে সুবিধার মনে হতো না- শুনেছি সে গাঁজার ব্যবসা করে। আমি প্রায়ই আমার মেয়েকে বলতাম এই ছেলের সাথে এভাবে যেখানে সেখানে ঘোরাঘুরি না করতে। কিন্তু আমার কথা শুনতো না।’
নিহতের মা জরিনা আরও বলেন, ‘গত শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে সাহিদা আমাদের সাথে বাসায়ই ছিলো। এমন সময় ফোনে ডেকে নেয়া হয় সাহিদাকে। পরে শনিবার দুপুরে আমার মেয়েকে গুলি করে হত্যার খবর পাই পুলিশের কাছ থেকে। আমি শুনেছিলাম ছেলের বাড়ি বিক্রমপুর। মনে হয় ওই ছেলেই আমার মেয়েকে এখানে নিয়ে এসে হত্যা করেছে।’
মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘কথিত প্রেমিকের সাথে দ্বন্দের বিষয়গুলো সামনে রেখে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। শীঘ্রই ঘটনা উদঘাটন হবে ও খুনি ধরা পড়বে।’