মুন্সীগঞ্জের বালিগাঁও বাজার, যা টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত, ভোরবেলা যেন শ্রমবাজারে পরিণত হয়। বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে ৬টার দিকে সড়কের দুই পাশে শতাধিক নারী-পুরুষকে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। দূর থেকে মনে হতে পারে কোনো বড় ঘটনা ঘটেছে। তবে কাছে গিয়ে জানা যায়, এটি শ্রম বিক্রির হাট।
উত্তরবঙ্গের নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর এবং কুড়িগ্রামের মতো জেলার নারী-পুরুষ শ্রমিকরা জীবিকার তাগিদে এখানে এসে জড়ো হন। এদের প্রধান কাজ আলু রোপণ এবং উত্তোলন। প্রতিদিন ভোরে বালিগাঁওসহ মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে এভাবেই ভিড় জমায় শ্রমিকরা। কৃষকদের সঙ্গে দর কষাকষি করে তারা দিনপ্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় কাজের চুক্তি করেন। কেউ কেউ দৈনিক কাজ করেন, আবার কেউ সাত দিন, এক মাস কিংবা পুরো মৌসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।
কৃষকদের মতে, স্থানীয় শ্রমিক সংকটের কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে আসা এসব শ্রমিকের ওপর নির্ভর করতে হয়। তারা শুধু আলু রোপণ নয়, ফসল তোলা থেকে শুরু করে তা সংরক্ষণ এবং পরিবহন পর্যন্ত নানা কাজে অংশ নেন। কয়েক মাস পর এই শ্রমিকরাই আলু উত্তোলন শেষে হিমাগার কিংবা কৃষকের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
জানা গেছে, বালিগাঁও ছাড়াও টঙ্গিবাড়ীর দিঘিরপাড়, আলদী, হাসাইল, বেতকা; মুন্সীগঞ্জ সদরের মুক্তারপুর, মুন্সীরহাট, চিতলিয়া, চরডুমুরিয়া, শিলই, বাংলাবাজার; গজারিয়ার ভবেরচর বাসস্ট্যান্ড; সিরাজদীখানের নিমতলা ও ইছাপুরা চৌরাস্তা; লৌহজংয়ের মাওয়া চৌরাস্তা ও শ্রীনগরের চকবাজারে একই চিত্র দেখা যায়। এসব স্থানে সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে শ্রমবাজার বসে।
লক্ষাধিক শ্রমিকের পদচারণায় মুখরিত মুন্সীগঞ্জের গ্রামগুলো যেন উত্তরবঙ্গের এক টুকরো চিত্র হয়ে ওঠে। কৃষি শ্রমিকদের এ মৌসুমি ভিড় শুধু জেলার কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে না, বরং দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।