বিদেশ হতে বীজ আসছে শুনেই হুমড়ি খেয়ে কৃষকরা ছুটছেন ডিলার ও আলু আমদানিকারকদের কাছে। বর্তমানে ৫০ কেজি ওজনের আমদানি করা আলু বীজ বিক্রি হচ্ছে ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকায়। যা এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকায়।
হিমাগারে সংরক্ষিত কৃষকের পুরানো ৫০ কেজি ওজনের বীজ আলুর বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়। এ বছর আলুর বাজার দর সবসময় বেশি থাকায় বেশি লাভের আশায় আলু চাষের দিকে ঝুঁকছেন মুন্সীগঞ্জের কৃষকরা। সরকারিভাবেও বাড়ছে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা। কিন্তু বীজ সংকট হবে শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
এদিকে আলু উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই টিএসপি সার সংকটের কথা বলে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি বস্তা টিএসপি সার সরকার ১ হাজার ৩৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করলেও সেই সার এখনো বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে এবং এ বছর আর টিএসপি সার আমদানি করা হবে না এই অজুহাত দিয়ে বাড়ানো হচ্ছে দাম।
এছাড়া জমির উচ্চ জমা মূল্যের কারণেও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। উচ্চ মূলে জমি জমা রেখে এখন একদিকে বীজের উচ্চমূল্য, অন্যদিকে বীজ না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন তারা।
আলু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অরিত্র এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. রণি শেখ বলেন, আমরা আলু আমদানির যখন এলসি করি, তখন অল্প পরিমাণ লাভে ডিলারদের কাছে বীজ আলু বিক্রি করে দেই। ডিলাররাই কারসাজি করে দাম বাড়ান।
তিনি আরও বলেন, এ বছর হল্যান্ডে দেশে আলু রোপণ মৌসুমে বৃষ্টি হওয়ায় সেখানে আলু উৎপাদন বিলম্ব হয়। এ কারণে বীজ সময়মতো তারা সরবরাহ করতে না পারেনি। তাই এ বছর এলসি কম হয়েছে। এছাড়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে আলু ভর্তি জাহাজগুলো দীর্ঘপথ ঘুরে বাংলাদেশে আসছে। এতে জাহাজ ভাড়া প্রায় ৩ গুন বেশি পড়ছে এবং সময়ও লাগছে বেশি। অপরদিকে আলু বহনকারী কাঠের বক্সগুলো ইউক্রেন-রাশিয়ার উৎপাদিত পাইন গাছের কাঠ থেকে তৈরি করা হয়। যুদ্ধের কারণে এখন অন্যত্র থেকে কয়েকগুণ বেশি মূল্যে গাছ কিনছে হল্যান্ডের বীজ রপ্তানিকারকরা। কৃষক যদি কাঠের বক্সের মাধ্যমে আলু না নিয়ে বস্তায় নিতেন তাহলে হয়ত ৫০ কেজি আলু আরো ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কমে বিক্রি করা যেত। কিন্তু বস্তায় ভরে আলু বিক্রি করলে কৃষকরা কিছুতেই বিশ্বাস করেন না যে এটি বিদেশ থেকে আমদানি করা বীজ। তাই বাধ্য হয়ে বক্সে আলু বিক্রি করতে গিয়ে দাম পড়ছে বেশি।
টংগিবাড়ি উপজেলার বালিগাঁও বাজারের সার ডিলার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর সার বিক্রির কোনো তালিকা পাইনি। গত বছরের তালিকায় বিক্রি করছি। টিএসপি সার গত বছর ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা বস্তা। এ বছর বিক্রি করছি ১ হাজার ৫০০ টাকায়। কেনা বেশি তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। পুরোপুরিভাবে সার আসতে শুরু করলে হয়ত দাম কমতে পারে।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, মুন্সীগঞ্জে গত মৌসুমে ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ এবং ১০ লাখ টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর মধ্য নভেম্বর থেকে শুরু হবে চলতি বছরের আলু রোপণ মৌসুম।
-সংগৃহীত