দেশের বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত মুন্সীগঞ্জ। জেলার লৌহজং উপজেলার কৃষক-কৃষাণীরা এখন আলু ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ অঞ্চলে প্রধান অর্থকরী ফসল আলু। উপজেলার দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে এখন কৃষকরা এখন আলু ক্ষেত পরিচর্যায় ক্ষেতে পানি, সার, কীটনাশক ছিটানো, নিড়ানি আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই কৃষি কর্মযজ্ঞে হাজারো রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গের নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা মাঠে কাজ করছে। আগামী মাসের শুরুতে আলু উত্তোলন শুরু হবে।গত বছর আলুর দামে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। সাধারণ ভোক্তা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে আলু ক্রয় করেছেন। এতে সাধারণ মানুষ আলুর দামে নাভিশ্বাস ফেললেও কৃষকদের মাঝে বেশ স্বস্তি দেখা গেছে। আলুর দাম হওয়ায় মধ্যস্থভোগী ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে মোটা অংকে লাভবান হয়েছে। এ বছর কৃষক বেশী দামের আশায় আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে নতুন আলুর বর্তমান বাজার মূল্য নিম্নমূখী হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।প্রান্তিক কৃষকরা জানান, খাল দখল-ভরাটে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমিতে বর্ষার পানি আটকে থাকায় এ বছর আগাম আলু চাষাবাদ ব্যাহত হয়।এ ছাড়া গত মৌসুমে আলুর বাজার মূল্যে লাভবান হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এবার চড়া দামে বীজ আলু, সার ও জমি ভাড়া নিয়ে বেশ উৎসাহ ও হতাশা নিয়ে কৃষকরা আলু রোপণ করছেন। তাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে লোকসান কাটিয়ে লাভের আশায় আলুর ক্ষেত পরিচর্যায় মাঠে কাজ করছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু আবাদ করছেন বর্তমান বাজারে আলুর মূল্য কম তাই এ বছর আর্থিক ক্ষতির মুখে পরবেন বলে মনে করছেন।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আগামী মার্চের শুরু থেকে আলু উত্তোলন শুরু করবে কৃষকরা।সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে এখন সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে আলু ক্ষেত। আলু ক্ষেতে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ওষুধ ও ইঞ্জিন চালিত পাম্প মেশিন দিয়ে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে পানি, আবার কোথাও আলু জমিতে থাকা আগাছা পরিস্কার করছে কৃষকরা।কথা হয় হাড়িদিয়া গ্রামের কৃষক কার্তিক দাসের সাথে। তিনি বলেন, গত বছর আলুর বাজার মূল্য বেশি পাওয়ায় এ বছর আলুর জমি ভাড়া-বর্গা চাষের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। গত বারের চেয়ে দিগুণ-তিনগুণ মূল্যে জমি ভাড়া বীজ আলু ও সার ক্রয় করে এবার তিনি ১২ একর জমিতে আলুর আবাদ করছেন। এ বছর উৎপাদন মূল্য বেশি থাকায় এবং বর্তমান বাজারে নতুন আলুর মূল্য থাকায় পুঁজি উঠানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন।কালুরগাঁও গ্রামের কৃষক জসীম শেখ জানান, এবার বীজ আলু খুব সংকট ছিলো ৪০ কেজির ১ বস্তা বীজ আলুর মূল্য ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং বাক্স আলুর বীজ ১ বক্সের মূল্য ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকায় ক্রয় করে আলু রোপণ করেছি। ৪০ কেজি ১ বস্তা বীজ আলুতে ২০ থেকে ২২ মণ আলু উৎপাদন হয়। এবার এতো টাকা খরচ করে আলু রোপণ করছি। কিভাবে পুঁজি উঠাবেন তা নিয়ে চিন্তিত আছেন।লতিফ শেখ বলেন, এ বছর তিনি ২০ একর জমিতে আলুর চাষ করেছেন। এ বছর উৎপাদন মূল্য বেশি থাকায় বিক্রয় মূল্য নিয়ে চিন্তিত।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ শেষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ১৫ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এবারও আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।