দীর্ঘ নীরবতার পর আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী প্রত্ননিদর্শন সোনারং জোড়া মঠ। এক সময় জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় থাকা অষ্টাদশ শতাব্দীর এই স্থাপনাটি সংস্কারের পর এখন নতুন রূপে দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। মঠ দু’টির গায়ে সাদা ও পোড়ামাটির রঙের মেলবন্ধন, দেয়ালে নান্দনিক কারুকাজ আর চারপাশের সবুজ পরিবেশ—সব মিলিয়ে এটি যেন আবারও অতীতের গৌরব ফিরিয়ে এনেছে।
প্রতিদিনই এখানে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ—কেউ জানতে চান ইতিহাস, কেউবা উপভোগ করতে আসেন মনোরম পরিবেশ। যদিও এটি “জোড়া মঠ” নামে পরিচিত, আসলে এটি দুটি মন্দিরের সমন্বয়ে গঠিত। একটি প্রস্তরলিপি থেকে জানা যায়, স্থানীয় রূপচন্দ্র নামের এক হিন্দু ব্যক্তি বড় কালীমন্দিরটি ১৮৪৩ সালে এবং ছোট শিবমন্দিরটি ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করেন। বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার, এবং উপাসনালয়ের সামনের বারান্দার দৈর্ঘ্য বড় মঠে ১.৯৪ মিটার ও ছোটটিতে ১.৫ মিটার।
মঠের সামনে রয়েছে একটি বড় পুকুর, যা সম্ভবত বড় মন্দির নির্মাণের সময়ই খনন করা হয়েছিল। এই পুকুর ও আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মঠের নান্দনিকতাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সংস্কারের পরও মঠের পুরোনো গঠন ও নকশা অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে, যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় সে সময়ের শিল্পরীতি ও স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য।
ইতিহাস ও প্রকৃতির এক অপূর্ব সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই স্থান এখন টিয়া পাখির কলরবে আরও জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মুন্সিগঞ্জ জেলার টংগিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত এই প্রত্ননিদর্শন শুধু একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং বাংলার স্থাপত্য ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। সংস্কারের পর সোনারং জোড়া মঠ আজ নতুন প্রজন্মের জন্য ইতিহাস জানার এক অনন্য গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।







