মুন্সিগঞ্জে আলুর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি, এবং এর পেছনে দায়ী সিন্ডিকেট। হিমাগারে মজুত থাকা আলু ৫ ধাপে হাত বদলে বাজারে পৌঁছানোর পর বাড়ছে এর দাম। কৃষকরা যেখানে প্রতি কেজি আলু ২৭ থেকে ২৮ টাকায় বিক্রি করছেন, সেখানে তা খুচরা বাজারে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় পৌঁছে যাচ্ছে।
সিন্ডিকেটের কারসাজি
মুন্সিগঞ্জের আলু বাজারে সিন্ডিকেটের দাপট বাড়ছে। কৃষকরা আলু উৎপাদন করলেও তার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। একদিকে হিমাগার মালিকরা এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা একযোগে দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। কৃষক থেকে ভোক্তার হাতে পৌঁছানোর আগে ৫ ধাপে আলুর দাম বেড়ে যাচ্ছে।
হিমাগারে আলু মজুতের পর দাম ৩৮ টাকা কেজি হয়ে যায়। এরপর পাইকাররা সেগুলো ৪৭ টাকায় কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন। সবশেষে, খুচরা বিক্রেতারা ওই আলু ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। এই দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির ফলে ভোক্তাদের কাছে আলু পৌঁছানোর আগে মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে কয়েকগুণ।
কৃষক ও ভোক্তার ক্ষোভ
মুন্সিগঞ্জের কৃষকরা জানাচ্ছেন, তাদের উৎপাদন খরচ ১৭ থেকে ১৮ টাকা কেজি হলেও পাইকাররা তা ২৮ টাকায় কিনছেন। কিন্তু হিমাগারে সংরক্ষণের পর সেগুলোর দাম বাড়িয়ে ৩৮ টাকা করা হচ্ছে, যা পাইকারদের কাছে ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে এসে দাম আরও বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় পৌঁছাচ্ছে, যার ফলে শেষ পর্যন্ত ভোক্তারা অতিরিক্ত দাম পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমরা যখন ২৭ থেকে ২৮ টাকায় আলু বিক্রি করি, তখন দাম বাড়ানোর কোনো কারণ নেই। কিন্তু হিমাগারে যাওয়ার পর দাম বেড়ে যায়। এর পর পাইকারি বাজারে আবার বাড়ে, এরপর খুচরা বাজারেও মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।’
ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি
মুন্সিগঞ্জ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাসেদ মোল্লা জানান, ‘হিমাগারে আলু সংরক্ষণে খরচ আরও বেড়ে যায়, তবে একে একে ৫ ধাপে দামের বৃদ্ধি খুবই অস্বাভাবিক। আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানি, সোজা দাম বাড়ানোর বিষয়টি সিন্ডিকেটের কাজ।’
এক আলু ব্যবসায়ী বাবু রাজ বলেন, ‘এবার আমি ২৭ থেকে ২৮ টাকা দরে ৭ লাখ টাকার আলু কিনেছি, কিন্তু হিমাগারে সংরক্ষণ করা হলে তার পরিমাণ ৩৮ টাকায় চলে যায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাকে ৪৭ টাকায় কিনে, শেষে খুচরা বিক্রেতারা ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছে।’
বাজার পরিস্থিতি এবং সরকারি তদারকি
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, ‘এ বছর প্রায় ৫০ হাজার টন কম আলু মজুত হয়েছে, তবে ১ লাখ ৫১ হাজার মেট্রিক টন আলু এখনো মজুত রয়েছে। আমরা দাম নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়িয়েছি, তবে সিন্ডিকেটের প্রভাব মোকাবেলা করতে আরও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’
এদিকে, জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন, ‘আমরা বাজার তদারকি করছি এবং প্রয়োজনে প্রশাসনকে নিয়ে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাজারে যাতে সিন্ডিকেট কাজ না করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।’
মুন্সিগঞ্জের আলু বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় কৃষক ও ভোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। একাধিক হাত বদলের ফলে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও, সিন্ডিকেটের দাপট মোকাবেলা করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। বাজারের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য তদারকি বাড়ানোর এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনই।
-সংগৃহীত